আজ আমরা পাখির কয়েকটি খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব যা অনেকগুলি প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস এবং কৃত্রিম মাল্টি ভিটামিন ও খনিজ(ঔষধ, সাপ্লিমেন্টস) এর পরিপূরক এবং বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
খাঁটি মধু
বিশুদ্ধ মধু প্রাকৃতিক খনিজ ও ভিটামিনের একটি চমৎকার উৎস। দীর্ঘ সময়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মধু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া নিরোধক(anti-bancterial)। ষাট ধরনের ও বেশী ব্যাকটেরিয়ার বিপক্ষে মধু এন্টিবায়োটিক ঔষধের থেকেও বেশি কার্যকর ভুমিকা পালন করে। মধু শতভাগ প্রাকৃতিক হওয়ার

মধু
কারনে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। মধুতে আছে গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ (ফলশর্করা) এবং খনিজ উপাদান যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ক্লোরিন, সালফার, আয়রন এবং ফসফেট। ভাল মানের মধুতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন B1, B2, C , B6, B5 এবং B3 থাকে।
খাঁটি মধুর নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানঃ
আপনি যে মধু ব্যবহার করবেন তা অবশ্যই খাঁটি ও বিশুদ্ধ হতে হবে এবং এর উপর নির্ভর করবে এর কার্যকারিতা। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে দেয়া হলঃ
- আশ-শেফা মধুঘরঃ মগবাজার ওয়্যারলেস গেট সংলগ্ন রেল লাইনের কাছে।
- শস্য প্রবর্তনাঃ ধানমণ্ডি আড়ং এর কাছাকাছি প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টার এর বিপরীতে এবং বনানী ১১ (স্বপ্ন সুপার শপ এর কাছে)
পাখিকে খাওয়ানোর পদ্ধতিঃ
চায়ের চামচের চার ভাগের ১ ভাগ অথবা ২ ভাগের ১ ভাগ মধু, ১ কাপ(২৫০ মিঃ লিঃ) বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ছোট বা মাঝারি আকারের পাখিকে খেতে দিতে পারেন। অসুস্থ পাখির ক্ষেত্রে অথবা শীত কালে মধুর পরিমান দিগুন করে দিতে হবে (১ কাপ পানিতে ১ চা চামচ মধু)। প্রচণ্ড শীতের সময় অথবা খুব দুর্বল পাখির ক্ষেত্রে আপনি আপনার আঙুল/ড্রপার এ মধু নিয়ে সরাসরি খাওয়াতে পারেন। এছাড়া পাখির নরম খাবার(সফট ফুড)/এগ ফুডের সাথেও মধু মিশিয়ে দেয়া যায়। সাধারানতঃ প্রতি সপ্তাহে ১ দিন বা ২ দিন মধু খাওয়ানই যথেষ্ট।
সজনে পাতা
সজনে(বৈজ্ঞানিক নামঃ Moringa oleifera) পাতা(Moringla Leaf) একটি প্রাকৃতিক সুষম খাবার যাতে ভিটামিন , খনিজ পদার্থ , প্রোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগিক উপাদান বিদ্যমান। উচ্চ ঘনত্বের উদ্ভিজ্জ পুষ্টি থেকে সজনে পাতা এইসব উপাদান আহরণ করে। এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন এ (বিটা ক্যারোটিন), ভিটামিন B1-(থায়ামাইন), ভিটামিন B2 (Riboflavin), ভিটামিন B3(Niacin), ভিটামিন B6 (পাইরিডক্সিন), ভিটামিন B7 (biotin), ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক এসিড), ডি (Cholecalciferol), ভিটামিন ই (Tocopherol) এবং ভিটামিন কে। সজনে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন উৎস (30%) হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এতে ১৮ অ্যামিনো অ্যাসিড (সকল ৮ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড), ৪৭ সক্রিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ৩৬ এন্টি ইনফ্লামেটরিস(anti-inflammatories) রয়েছে. উপরন্তু সজনে গুঁড়াতে কমলালেবুর থেকে ৭ গুন বেশী ভিটামিন সি, একটি গাজরে বিদ্যমান ভিটামিন A থেকে ৪ গুন বেশী ভিটামিন A, দুধের থেকে ৪ গুন বেশী ক্যালসিয়াম, কলার থেকে ৩ গুন বেশী পটাসিয়াম, সেইসাথে “zeatin”, “quercetin”, “beta-sitosterol”, “caffeoylquinic acid”,”kaempferol”, “silymarin” এবং অপরিহার্য খনিজ পদার্থ জিঙ্ক এবং আয়রন বিদ্যমান.
সজনে এমন একটি খাদ্য যা শরীর খুব সহজেই গ্রহন করতে পারে। আর মানুষের অথবা পাখির শরীরের জন্য দরকারী সকল ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, খনিজ পদার্থ এবং প্রোটিন এতে বিদ্যমান। যার ফলে অন্যান্য সকল কৃত্রিম উৎসের(ঔষধ, সাপ্লিমেন্টস) নির্ভরতা কমে যাবে।
- সজনে গাছ
- সজনে গাছ
- সজনে পাতা
[Images from Internet. Hence the copyright is belongs to the respective photographers.]
কোথায় পাবেনঃ
সজনে গাছ যদিও এখন অনেক কমে গেছে কিন্তু আপনি যদি গাছটি চেনেন তাহলে হয়ত খুজে পেতে সুবিধা হবে। এছাড়াও বিদেশি কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা সজনে পাতা/পাতার গুড়া প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করে। এমন কিছু ওয়েব সাইটের ঠিকানাঃ
পাখিকে খাওয়ানোর পদ্ধতিঃ
সবথেকে ভাল পদ্ধতি হল পাখিকে তাজা সজনে পাতা খেতে দেয়া। এছাড়া আপনি পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে সীড মিক্স এর সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। ১ কেজি সীড(বীজ) মিক্স এর সাথে ১ চা চামচ (৫ মিলিঃ) খাবার উপযুক্ত নারকেল তেল(পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ বাজারে পাওয়া যায়) অথবা ১ চা চামচ (৫ মিলিঃ) লাল পাম তেল (বিদেশি ওয়েবসাইট) ভালভাবে মিশাতে হবে। এরপরে ৫ চা চামচ(২৫ গ্রাম) সজনে পাতার গুড়া তৈল মিশ্রিত সীডে(বীজ) হালকা ভাবে মিশাতে হবে যাতে সীডের(বীজের) উপর সজনে পাতার গুড়ার একটি হালকা আবরনের মত পড়ে। এই সীড মিক্স পাখিকে প্রতি মাসে পর পর সাত (৭) দিন আর ব্রিডিং এর আগের মাসে এক সপ্তাহ পর পর খেতে দিতে পারেন। পাখির নরম খাবার(সফট ফুড)/এগ ফুডের সাথেও সজনে পাতার গুড়া মিশিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া ইনফিউশন পদ্ধতিতে(ফুটন্ত পানি চুলা থেকে নামিয়ে তার মধ্যে সজনে পাতার গুড়া দিয়ে) ১ চা চামচ (৫ গ্রাম) সজনে পাতার গুড়া ১ কাপ(২৫০ মিলিঃ) পানিতে মিশিয়ে ঠাণ্ডা করে তাতে আধা চা চামচ খাঁটি মধু যোগ করে পাখিকে খেতে দিতে পারেন।
ঘৃতকুমারী(Aloe vera)
ঘৃতকুমারীর(Aloe vera) শাঁস/জেল বৈচিত্র্যপূর্ণ ভিটামিনের সমাহার। এটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ই এবং বিটা-ক্যারোটিন

ঘৃতকুমারী(Aloe vera)
আর ভিটামিন এ। এটি গুটিকয়েক গাছের মধ্যে অন্যতম যাতে ভিটামিন বি১২(B12) পাওয়া যায়। এতে বিভিন্ন খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার, ক্রোমিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং আয়রন বিদ্যমান। ঘৃতকুমারী(Aloe vera) শাঁস/জেলে প্রোটিন উত্পাদনের জন্য ২০টি অ্যামাইনো অ্যাসিড (Amino Acid) রয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আটটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে ঘৃতকুমারীশাঁস/জেলে সাতটি অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান। এটি ইমিউন সিস্টেম কে প্রভাবিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও এতে বিদ্যমান Lipase এবং proteases যা খাদ্য হজম করতে সাহায্য করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।



Recent Comments